হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয়
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয়:
প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোক একটি মারাত্মক সমস্যা। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারিয়ে গেলে হিট স্ট্রোক হয়। এটি মস্তিষ্ক, হৃদয়, কিডনি এবং অন্যান্য অঙ্গকে ক্ষতি করতে পারে, এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কাদের বেশি?
- শিশু ও বয়স্ক: শিশুদের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিকশিত হয়নি এবং বয়স্কদের শরীরে তরলের পরিমাণ কম থাকে।
- গর্ভবতী মহিলারা: গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে তরলের চাহিদা বেশি থাকে।
- স্থূলকায় ব্যক্তিরা: স্থূলকায় ব্যক্তিদের শরীরে অতিরিক্ত চর্বি শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।
- দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থ ব্যক্তিরা: যারা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি রোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় ভোগেন তাদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি।
- ওষুধ খেয়ে যারা: কিছু ওষুধ ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
- শারীরিক পরিশ্রমে নিয়োজিত ব্যক্তিরা: যারা কাজের ধরন বা ব্যায়ামের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় শারীরিক পরিশ্রম করেন তাদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি।
- অ্যালকোহল ও মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা: অ্যালকোহল ও মাদকদ্রব্য শরীর থেকে তরল বের করে ফেলে এবং ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণ:
- শরীরের তাপমাত্রা 40°C (104°F) এর বেশি: এটি হিট স্ট্রোকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
- প্রচণ্ড ঘাম: ঘাম বন্ধ হয়ে গেলে তাও হিট স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে।
- মাথাব্যথা: মাথাব্যথা হিট স্ট্রোকের একটি সাধারণ লক্ষণ।
- মাথা ঘোরা: মাথা ঘোরা বা মাথা হালকা লাগা অনুভূতি হতে পারে।
- বমি বমি ভাব: বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে।
- দুর্বলতা: দুর্বলতা এবং ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে।
- পেশীতে ব্যথা: পেশীতে ব্যথা ও টান অনুভূত হতে পারে।
- শ্বাসকষ্ট: দ্রুত ও কঠিন শ্বাস নেওয়া হতে পারে।
- বিভ্রান্তি: বিভ্রান্তি, মনে স্থিরতা না থাকা, মনোযোগ ধরে রাখতে অসুবিধা হতে পারে।
- অজ্ঞানতা: চরম পরিস্থিতিতে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয়:
১. প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন:
গরমে শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হয়, তাই নিয়মিত পানি পান করে শরীরের তরলের ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। পানি পানের পাশাপাশি ORS (Oral Rehydration Solution) পান করাও ভালো।
২. হালকা রঙের ঢিলেঢালা পোশাক পরুন:
হালকা রঙের পোশাক সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। ঢিলেঢালা পোশাক বাতাস চলাচলের সুযোগ করে দেয়।
৩. রোদে বের হওয়ার সময় সতর্ক থাকুন:
দুপুর ১১ টা থেকে ৪ টার মধ্যে রোদে বের হওয়া এড়িয়ে চলুন। যদি বের হতে হয়, তাহলে টুপি, ছাতা, সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
৪. শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে দিন:
গরমের দিনে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন।
৫. ঠান্ডা পরিবেশে থাকুন:
যতটা সম্ভব এয়ার কন্ডিশনড বা প্যানখার নিচে থাকুন। ঠান্ডা পানি দিয়ে স্নান করুন।
৬. স্বাস্থ্যকর খাবার খান:
হালকা, সহজপাচ্য খাবার খান। ফল, শাকসবজি, দই এবং অন্যান্য তরল খাবার বেশি খান।
৭. অ্যালকোহল ও মাদকদ্রব্য এড়িয়ে চলুন:
অ্যালকোহল ও মাদকদ্রব্য শরীর থেকে তরল বের করে ফেলে এবং ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
৮. ওষুধের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন: কিছু ওষুধ ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়। ওষুধ খাওয়ার সময় প্রচুর পানি পান করুন।
সুতরাং, আপনার স্বাস্থ্য নিয়ে সতর্ক থাকুন এবং হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় মেনে চলুন। আপনার স্বাস্থ্য আপনার সবচেয়ে বড় সম্পদ এবং তা সংরক্ষণ করতে সাহায্য করতে চাইবে।
ধন্যবাদ।